সারা বিশ্ব এক যোগে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় শিক্ষাক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থে সম্মানিত শিক্ষকগণ ঘরে থেকেই অনলাইনে শিক্ষাদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের অনেকেই স্মার্টফোন ব্যবহার করে সেই ক্লাসসমূহ সরাসরি দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু তারপরও নাকি মাত্র ২১% শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে। বাকি ৭৯% এর কী অবস্থা তা আমরা জানি না।
তাহলে এই অনলাইন ক্লাসের প্রকৃত লাভবান কে? এককথায় সহজ উত্তর সম্মানিত শিক্ষকগণ যাঁরা এই অনলাইন ক্লাস নিয়ে থাকেন তাঁরাই। সরকার তাঁদের কোনো আর্থিক সুবিধা দেয় কি না আমার জানা নেই। তবে আমার মতে তাঁদেরকে আর্থিক সুবিধা দেওয়া উচিত। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাঁরা তো নিয়মিত বেতন ভাতা পাচ্ছেন, তারপরও কেন আর্থিক সুবিধা দিতে হবে? দিতে হবে এই জন্যই যে, তাঁরা যেন কাজ করতে উৎসাহ হারিয়ে না ফেলেন।
স্বাভাবিক ক্লাসে অধিকাংশ শিক্ষকই ক্লাসে প্রবেশ করে বলতেন, ” যারা পড়া শিখে আসনি তারা দাঁড়িয়ে থাক, আর যারা পড়া শিখেছ তারা লিখা শুরু কর। ব্যস, তারপর ক্লাস শেষ। শিক্ষকদের বাড়িতে পড়ার কোনো তাগিদ ছিল না। ক্লাসে চিন্তা ভাবনা না করে ইচ্ছে মতো কথা বলতে পারতো। কিন্তু অনলাইনে সরাসরি পাঠদানের ক্ষেত্রে তা আর সম্ভব হচ্ছে না।
প্রথম প্রথম অনেক শিক্ষককে দেখেছি লাইভ ক্লাসে ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না, ঘেমে সারা শরীর একাকার। লিখতে গিয়ে বানান ভুল করেন। এখন সেই শিক্ষকদের লাইভ ক্লাসে মুখে খই ফোটে। বেশ চমৎকার প্রাক্ প্রস্তুতি নিয়েই এখন তাঁরা লাইভ অনলাইন ক্লাসে হাজির হন। বেকার ও অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকায় প্রায় সবার ক্লাস দেখার সুযোগ হয়।
খুব ভালো লাগে যখন দেখি শিক্ষকগণ বই পড়া শুরু করেছেন। দর্শক যেন কোনো ত্রুটি খুঁজে না পান সে ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ থাকেন। শিক্ষকদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে সকল শিক্ষার্থীই তাতে লাভবান হবে।
যাঁরা অনলাইন ক্লাসের সাথে সম্পৃক্ত তাঁদের সবাইকে সালাম ও অভিনন্দন।
লেখক
সাবেক প্রধান শিক্ষক
সমিতির হাট উচ্চ বিদ্যালয়
হাটহাজারি,চট্টগ্রাম