গোবিন্দগঞ্জ(গাইবান্ধা) সংবাদ দাতা: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ২৩ বছরেও মেলেনি পিতৃপরিচয় গামের্ন্টস কর্মি রাজিয়া সুলতানা পরি’র। পিতৃপরিচয়ের দাবিতে এখন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অবহেলিত এ নারী।
কি পাপ করেছে সমাজপতিদের কাছে নিস্পাপ এ মেয়ে। নিস্পাপ এ মেয়ের পিতৃপরিচয় চাওয়া কি অপরাধ? শৈশব থেকে কৈশোর এখন যৌবন বয়সে এসে প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের বিভিন্ন দপ্তরে পিতৃপরিচয়ের দাবীতে ডিএনএ টেস্ট করার জন্য আবেদন করেছে। অভিযুক্ত আব্দুর রাজ্জাক ‘আলহাজ্ব আহম্মদ আলী দাখিল মাদরাসা’র সুপার।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের রোয়াগাঁও গ্রামের এই নিস্পাপ কন্যা পরি’র মা সালেহা জানান, আলহাজ্ব আহম্মদ আলী দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে চাচাতো ভাই। প্রথম বিয়ের সংসারে তার একটি কন্যা সন্তান আছে। সেই সংসারের স্বামী মারা যাওয়ায় তিনি স্বামী পরিত্যক্ত অবস্থায় বাবার বাড়িতে বসবাস করতে থাকে। সংসারে অভাবের তাড়নায় চাচার বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে।
লম্পট আব্দুর রাজ্জাক তখন মহিমাগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসার কামিল বিভাগের ছাত্র থাকা অবস্থায় বিভিন্ন প্রলোভনে শারিরীক অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। তিনি আরো বলেন, অবৈধ সম্পর্কের মাঝে গর্ভে আসে পরি। গর্ভাবস্থায় ৭ মাস চলাকালে দু’টি পরিবারের সমস্যা সমাধানে চলতে থাকে সামাজিক বিচার শালিশ। এরই মাঝে জন্ম হয় রাজিয়া সুলতানা পরি’র।
উল্টো সমাজপতিরা কোণঠাসা করে রাখে আমার পরিবারকে, নিরুপায় হয়ে কন্যার পিতৃপরিচয়ের দাবীতে আদালতে মামলা করে।। অর্থাভাবে মামলাটি পরিচালনা করতে না পারায় মামলাটি খারিজ হয়ে যায় আদালতে। এ দিকে প্রভাবশালী আব্দুর রাজ্জাক বিভিন্ন ভয়-ভীতি ও কন্যা পরি’কে হত্যার হুমকি দিতে থাকে।
পরবর্তীতে আবারও বিয়ে করেন পরি’র মা সালেহা পাশের ডাসপাড়া গ্রামের আকরাম হোসেনকে। পরি’র লালন পালনের দায়িত্ব নেয় নানা-নানী। নানার পরিচয়ে পরি লেখাপড়া শুরু করেন স্থানীয় বটতলি মাদ্রাসায়, নবম শ্রেণীতে উঠার পর আর ভাগ্যে জোটেনি বিভিন্ন কারণে পড়ালেখা।
অবশেষে জীবিকার সন্ধানে ঢাকা সাভারে একটি গামের্ন্টসে ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করছেন।
রাজিয়া সুলতানা পরি বলেন, জীবনের ২৩টি বছর পিতৃপরিচয়ের জন্য নানা ভাবে লাঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছি। আমার অপরাধ কি? শুনেছি ডিএনএ টেস্ট করলে নাকি প্রকৃত পিতৃপরিচয় জানা যাবে। এই স্বাধীন দেশে আমি কেন পিতার পরিচয় পাবো না? পিতার পরিচয়ে আমার জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্র হউক। পিতার স্বীকৃতি নিয়ে আগামী দিনে পথ চলতে চাই। কোনো সম্পদ আমি চাই না। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পিতার স্বীকৃতি আদায়ে আলহাজ্ব আহম্মদ আলী দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুর রাজ্জাক বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীসহ স্থানীয় জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা উচ্চ মাধ্যমিক কর্মকর্তা ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটিকে পাশে পেতে তাদের বরাবর অভিযোগ দিয়েছে এবং আইনগত ভাবে পিতার পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেস্টের জন্য গাইবান্ধা জেলা জর্জ আদালতে ১৪ জুলাই একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন সরকারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, গত ২৭ জুন রাজিয়া সুলতানা পরি’র একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে মাদ্রাসার সুপারকে প্রাথমিক পর্যায়ে শোকজ এবং ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মামুনুর রশিদের সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন,এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।সিটি০১/এমডিএএম/১৯